Saturday, 7 December 2024

ফিরিশতার প্রতি ঈমান

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

ফিরিশতাদেরকে জ্যোতি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে অগ্নিশিখা হতে। 

আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেই বস্তু থেকে, যা তোমাদেরকে বর্ণনা করা হয়েছে। 

অর্থাৎ মাটি থেকে।(মুসলিম ৭৬৭৮)

মালিক বিন স্বা’স্বাআহ কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

অতঃপর সপ্তম আসমান অতিক্রম করার পর আমার জন্য ’বায়তুল মা’মূর’ পেশ করা হল। 

আমি বললাম হে জিবরীল এটা কি? তিনি বললেন, এটা ’বায়তুল মা’মূর’তাতে প্রত্যহ 

সত্তর হাজার ফিরিশতা প্রবেশ করেন। যখন সেখান থেকে বের হয় অতঃপর তার প্রতি ফিরে আসার 

আর সুযোগ পান না। সেটাই তাঁদের সর্বশেষ প্রবেশ হয়।(বুখারী ৩২০৭, মুসলিম ৪৩৪)

জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

একদা আমার নিকট নবীগণকে পেশ করা হল। দেখলাম, মূসা (আঃ) হাল্কা দেহবিশিষ্ট মধ্যম ধরনের পুরুষ, 

যেন তিনি ইয়ামানের শানূআহ গোত্রের লোক। ঈসা বিন মারয়্যাম (আঃ)-কে দেখলাম, 

আমার দেখার মধ্যে সাদৃশ্যে তাঁর সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি ছিল উরওয়াহ বিন মাসঊদ। 

ইব্রাহীম (আঃ) কে দেখলাম, আমার দেখার মধ্যে সাদৃশ্যে তাঁর সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি ছিল 

তোমাদের সঙ্গী উদ্দেশ্য তিনি নিজে। আর জিবরীল (আঃ) কে দেখলাম, 

আমার দেখার মধ্যে সাদৃশ্যে তাঁর সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি ছিল দিহয়্যাহ।(মুসলিম ৪৪১)

Wednesday, 16 October 2024

Faith in angels

 Badri Sahabi Rifa' ibn Rafi' al-Zuraqi (RA) said, Jibreel came to the Prophet sallallaahu 'alaihi wasallam and said:How do you consider the participants in the Battle of Badr? He said, I consider him to be among the greatest Muslims.Or any similar sentence he said. Jibreel (A.S.) said, "Similar to the angels who participated in the Battle of Badr."Among the best angels. (Bukhari 3992)

On the authority of Abu Jarr (RA), the Messenger of Allah, may God bless him and grant him peace, said, "Surely I see,What you cannot see and hear, what you cannot hear. The sky is roaring.And this word is his outfit. There is no room for four fingers in it.Where no angel lowered his forehead in prostration to Allah. By God! If you knew what I know,But you laugh less and weep more, and in bed you do not enjoy pleasure with wives. Rather, you belong to Allah(Ahmad 21516, Tirmidhi 2312, Ibn Majah 4190, Hakeem 3883, Silsila Sahih 1722)

Ibn Abbas (RA) said that in the battle of Badr, an Ansari man of the Muslims was chasing after a man of the polytheists.Suddenly he heard the sound of whips above him and the sound of horsemen neighing, advance Hayyum.Then he saw the polytheist in front of him, he fell down in anger. Noticed, the nose of the polytheist is broken and His face is torn. As if struck by a whip, the whole being turned green or black.Ansari came and told the Prophet (SA) what had happened. He said, "You are right."This was help from the third heaven. (Muslim 4687)

Aisha (RA) said: When the Messenger of Allah, may God bless him and grant him peace, came back from the ditch and took a bath with his arms down,Gabriel (A.S.) came and said to him, "Have you put down your arms?" By God!we didn't keep Go out to them. The Prophet, may God bless him and grant him peace, said, To whom?Gabriel (A.S.) pointed to Banu Qurayza. (Bukhari 4117, Muslim 4697)

ফিরিশতার প্রতি ঈমান

বদরী সাহাবী রিফাআহ ইবনে রাফে’ যুরাক্বী (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিবরীল এসে বললেন, বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদেরকে আপনাদের মাঝে কীরূপ গণ্য করেন? তিনি বললেন, সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিমদের শ্রেণীভুক্ত গণ্য করি। অথবা অনুরূপ কোন বাক্যই তিনি বললেন। জিবরীল (আঃ) বললেন, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ফিরিশতাগণও অনুরূপ সর্বশ্রেষ্ঠ ফিরিশতাগণের শ্রেণীভুক্ত।(বুখারী ৩৯৯২)

আবূ যার্র (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অবশ্যই আমি দেখি, যা তোমরা দেখতে পাও না এবং শুনি, যা তোমরা শুনতে পাও না। আকাশ কট্‌কট্ করে শব্দ করছে। আর এ শব্দ তার করা সাজে। এতে চার আঙ্গুল পরিমাণ এমন জায়গা নেই, যেখানে কোন ফিরিশতা আল্লাহর জন্য সিজদায় নিজ কপাল অবনত রাখেননি। আল্লাহর কসম! তোমরা যদি জানতে যা আমি জানি, তবে তোমরা কম হাসতে এবং বেশী কাঁদতে এবং বিছানায় তোমরা স্ত্রীদের সাথে আনন্দ উপভোগ করতে না। বরং তোমরা আল্লাহর আশ্রয় নেওয়ার জন্য পথে পথে বের হয়ে যেতে।(আহমাদ ২১৫১৬, তিরমিযী ২৩১২, ইবনে মাজাহ ৪১৯০, হাকেম ৩৮৮৩, সিলসিলা সহীহাহ ১৭২২)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, বদর যুদ্ধে মুসলিমদের এক আনসারী ব্যক্তি মুশরিকদের এক ব্যক্তির পিছনে ধাওয়া করছিল।হঠাৎ সে তার উপরে চাবুকের শব্দ শুনতে পেল এবং অশ্বারোহীর শব্দ ঘোড়া হাঁকানোর শব্দ শুনতে পেল, অগ্রসর হও হাইযূম।অতঃপর সে মুশরিককে তার সামনে দেখতে পেল, সে চিৎ হয়ে পড়ে গেল। লক্ষ্য করল, মুশরিকের নাক বিক্ষত হয়েছে এবং তার মুখমণ্ডল ছিঁড়ে গেছে। যেন চাবুকের আঘাত পড়েছে, ফলে পুরোটা সবুজ বা কালো হয়ে গেছে। আনসারী এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  কে ঘটনা খুলে বললে তিনি বললেন, ঠিক বলেছ, এ ছিল তৃতীয় আসমান থেকে সাহায্য।(মুসলিম ৪৬৮৭)

আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দক থেকে ফিরে এসে অস্ত্র নামিয়ে রেখে গোসল করলে জিবরীল (আঃ) এসে নিজ মাথা থেকে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে তাঁকে বললেন, আপনি অস্ত্র নামিয়ে রেখেছেন? আল্লাহর কসম! আমরা রাখিনি। ওদের দিকে বের হয়ে চলুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কাদের দিকে?জিবরীল (আঃ) বানূ কুরাইযার প্রতি ইঙ্গিত করলেন।(বুখারী ৪১১৭, মুসলিম ৪৬৯৭) 

Wednesday, 25 September 2024

তাওহীদ ও শির্ক ২ Tawhid O Shirk 2

আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তোমার নিকটতম স্বজনবর্গকে তুমি সতর্ক ক’রে দাও। 

(শুআ’রাঃ ২১৪) এই আয়াত যখন অবতীর্ণ হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আত্মীয় ও বংশকে 

সম্বোধন করে বললেন, হে কুরাইশদল! তোমরা আল্লাহর নিকট নিজেদেরকে বাঁচিয়ে নাও, 

আমি তোমাদের ব্যাপারে আল্লাহর নিকট কোন উপকার করতে পারব না। হে বানী আব্দুল মুত্তালিব! 

আমি আল্লাহর দরবারে তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না। হে চাচা আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব! 

আমি আল্লাহর দরবারে আপনার কোন কাজে আসব না। হে আল্লাহর রসূলের ফুফু সাফিয়্যাহ! 

আমি আপনার জন্য আল্লাহর দরবারে কোন উপকারে আসব না। হে আল্লাহর রসূলের বেটী ফাতেমা

আমার কাছে যে ধন-সম্পদ চাইবে চেয়ে নাও, আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোন উপকার করতে পারব না।(বুখারী ৩৫২৭, মুসলিম ৫২২, ৫২৫)

আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতে লোকেরা সবাই সুপারিশের জন্য আদম, 

নূহ, ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসা নবীর কাছে যাবে। তাঁরা একে একে সকলে ওযর পেশ করলে অবশেষে লোকেরা 

শেষনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রসূল।

আপনি আখেরী নবী। আল্লাহ আপনার পূর্বাপর যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। 

অতএব আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করুন। 

আপনি কি দেখছেন না, আমরা কি (ভয়াবহ) দুঃখ ও যন্ত্রণা ভোগ করছি।

তখন তিনি চলে যাবেন এবং আরশের নীচে তাঁর প্রতিপালকের জন্য সিজদাবনত হবেন। 

অতঃপর আল্লাহ তাঁর প্রশংসা ও গুণগানের জন্য তাঁর হৃদয়কে এমন উন্মুক্ত করে দেবেন, 

যেমন ইতিপূর্বে আর কারো জন্য করেননি। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও, চাও, তোমাকে দেওয়া হবে।

সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে। তখন শেষনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঠিয়ে বলবেন,

আমার উম্মতকে রক্ষা করুন হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মতকে রক্ষা করুন 

হে প্রতিপালক! আমার উম্মতকে রক্ষা করুন হে প্রতিপালক!(বুখারী ৩৩৪০, মুসলিম ৫০১) 

Saturday, 14 September 2024

তাওহীদ ও শির্ক Tawhid O Shirk

 আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, 

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 

কিয়ামতের দিন আল্লাহ আমার উম্মতের একটি লোককে বেছে নিয়ে 

তার সামনে নিরানব্বইটি আমল-নামা রেজিষ্টার বিছিয়ে দেবেন; 

প্রত্যেকটি রেজিষ্টার দৃষ্টি বরাবর লম্বা! অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, 

তুমি কি লিখিত পাপের কোন কিছু অস্বীকার কর? 

আমার আমল সংরক্ষক ফিরিশতা কি তোমার প্রতি কোন অন্যায় করেছে? 

লোকটি বলবে, না, হে আমার প্রতিপালক!

আল্লাহ বলবেন, তোমার কি কোন পেশ করার মত ওযর আছে অথবা তোমার কি কোন নেকী আছে? 

লোকটি হতবাক হয়ে বলবে, না, হে আমার প্রতিপালক! আল্লাহ বলবেন, অবশ্যই আমাদের কাছে তোমার একটি নেকী আছে। 

আর আজ তোমার প্রতি কোন প্রকার অবিচার করা হবে না।

অতঃপর একটি কার্ড বের করা হবে, যাতে লেখা থাকবে, 

আশহাদু আল লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ অআন্না মুহাম্মাদান আবদুহু অরসূলুহ।

আল্লাহ মীযান দাঁড়িপাল্লা আনতে আদেশ করবেন। লোকটি বলবে, হে আমার প্রতিপালক! 

এতগুলি বড় বড় রেজিষ্টারের কাছে এই কার্ডটির ওজন আর কী হবে? 

আল্লাহ বলবেন, তোমার প্রতি অবিচার করা হবে না।

অতঃপর রেজিষ্টারগুলোকে দাঁড়ির এক পাল্লায় এবং ঐ কার্ডটিকে অন্য পাল্লায় চড়ানো হবে। 

দেখা যাবে, 

রেজিষ্টারগুলোর ওজন হাল্কা এবং কার্ডটির ওজন ভারী হয়ে গেছে! যেহেতু আল্লাহর নামের চেয়ে অন্য কিছু ভারী নয়।

(আহমাদ ৬৯৯৪, তিরমিযী ২৬৩৯, ইবনে মাজাহ ৪৩০০, হাকেম১/৪৬)

আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 

নূহ (আঃ) মৃত্যুর সময়

তাঁর দুই ছেলেকে অসিয়ত করে বললেন,আমি তোমাকে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার আদেশ করছি। 

যেহেতু যদি সাত আসমান এবং সাত যমীনকে দাঁড়িপাল্লার এক পাল্লায় রাখা হয় এবং

 লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহকে অপর পাল্লায় রাখা হয়,

তাহলে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহর পাল্লা বেশী ভারী হবে। যদি সাত আসমান এবং সাত যমীন নিরেট গোলাকার বস্তু হয়,

তাহলেও লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ তা চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবে।(আহমাদ ৭১০১, ত্বাবরানী, বায্যার, মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২১৯, সিঃ সহীহাহ ১৩৪)

জাবের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোন কিছুকে 

আল্লাহর শরীক শির্ক না করে 

মারা যাবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি কোন কিছুকে আল্লাহর শরীক শির্ক করে মারা যাবে, 

সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে।(মুসলিম ২৭৯)

Friday, 30 August 2024

ইব্রাহীম (আঃ) ও ইসমাঈল (আঃ) এর কথা About Ibrahim (A.S.) and Ismail (A.S.).

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ইব্রাহীম (আঃ) ইসমাঈলের মা  হাজেরা ও তাঁর দুধের শিশু ইসমাঈলকে সঙ্গে নিয়ে 

কা’বা ঘরের নিকট এবং যমযমের উপরে একটি বড় গাছের তলে (বর্তমান) মসজিদের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় তাঁদেরকে রাখলেন। 

তখন মক্কায় না ছিল জনমানব, না ছিল কোন পানি। সেখানেই তাদেরকে রেখে গেলেন এবং একটি থলের মধ্যে 

কিছু খেজুর আর একটি মশকে স্বল্প পরিমাণ পানি দিয়ে গেলেন। তারপর ইব্রাহীম (আঃ) ফিরে যেতে লাগলেন। 

তখন ইসমাঈলের মা তাঁর পিছু পিছু ছুটে এসে বললেন, হে ইব্রাহীম! আমাদেরকে এমন এক উপত্যকায় ছেড়ে দিয়ে 

আপনি কোথায় যাচ্ছেন, যেখানে না আছে কোন সঙ্গী-সাথী আর না আছে অন্য কিছু?তিনি বারংবার এ কথা বলতে থাকলেন। 

কিন্তু ইব্রাহীম (আঃ) সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করলেন না। তখন হাজেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, 

আল্লাহ কি আপনাকে এর হুকুম দিয়েছেন? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। উত্তর শুনে হাজেরা বললেন, 

তাহলে তিনি আমাদেরকে ধ্বংস ও বরবাদ করবেন না। অতঃপর হাজেরা ফিরে এলেন।

ইব্রাহীম (আঃ) চলে গেলেন। পরিশেষে যখন তিনি সানিয়্যাহ নামক স্থানে এসে পৌঁছলেন, 

যেখানে স্ত্রী পুত্র আর তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলেন না, তখন তিনি কা’বা ঘরের দিকে মুখ ক’রে দু’হাত তুলে এই দু’আ করলেন,

হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার কিছু বংশধরকে ফল-ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র গৃহের নিকট বসবাস করালাম;

হে আমাদের প্রতিপালক! যাতে তারা নামায কায়েম করে। সুতরাং তুমি কিছু লোকের অন্তরকে ওদের প্রতি অনুরাগী ক’রে দাও এবং

ফলাদি দ্বারা তাদের জীবিকার ব্যবস্থা কর; যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। (সূরা ইব্রাহীম ৩৭)

অতঃপর ইব্রাহীম (আঃ) চলে গেলেন। ইসমাঈলের মা শিশুকে দুধ পান করাতেন আর নিজে ঐ মশক থেকে পানি পান করতেন। 

পরিশেষে ঐ মশকের পানি শেষ হয়ে গেলে তিনি নিজেও পিপাসিত হলেন এবং ঐ কারণে বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ায় 

তাঁর শিশুপুত্রটিও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। তিনি শিশুর প্রতি তাকিয়ে দেখলেন,পিপাসায় শিশু মাটির উপর ছট্ফট্ করছে। 

শিশু পুত্রের এ করুণ অবস্থার দিকে তাকানো তার পক্ষে সহ্য হচ্ছিল না। তিনি সরে পড়লেন এবং তাঁর অবস্থান ক্ষেত্রের নিকটতম 

পর্বত হিসাবে ’সাফা’কে পেলেন। তিনি তার উপর উঠে দাঁড়িয়ে উপত্যকার দিকে মুখ ক’রে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলেন, 

কাউকে দেখা যায় কি না। কিন্তু তিনি কাউকে দেখতে পেলেন না। তখন সাফা পর্বত থেকে নেমে আসলেন। 

অতঃপর যখন তিনি উপত্যকায় পৌঁছলেন, তখন আপন পিরানের (ম্যাঙির) নিচের দিক তুলে একজন শ্রান্তকস্নান্ত মানুষের মত 

দৌড়ে উপত্যকা পার হলেন। অতঃপর ’মারওয়া’ পাহাড়ে এসে তার উপরে উঠে দাঁড়ালেন। অতঃপর চারিদিকে দৃষ্টিপাত ক’রে 

কাউকে দেখার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। এইভাবে তিনি পাহাড়দ্বয়ের মাঝখানে সাতবার আসা-যাওয়া করলেন। 

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ কারণে হজ্জের সময় হাজীগণের এই পাহাড়দ্বয়ের 

মধ্যে সাতবার সায়ী বা দৌড়াদৌড়ি করতে হয়।

এভাবে শেষবার যখন তিনি মারওয়া পাহাড়ের উপর উঠলেন, তখন একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন। 

তখন তিনি নিজেকেই বললেন, চুপ! অতঃপর তিনি কান খাড়া ক’রে ঐ আওয়াজ শুনতে লাগলেন। 

আবারও সেই আওয়ায শুনতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, তোমার আওয়াজ তো শুনতে পেলাম। 

এখন যদি তোমার কাছে সাহায্যের কিছু থাকে, তবে আমাকে সাহায্য কর। 

হঠাৎ তিনি যমযম যেখানে অবস্থিত সেখানে জিবরীল (আঃ) ফিরিশতাকে দেখতে পেলেন। 

ফিরিশতা তাঁর পায়ের গোড়ালি দিয়ে অথবা নিজ ডানা দিয়ে আঘাত করলেন। ফলে আঘাতের স্থান থেকে পানি প্রকাশ পেল।

হাজেরা এর চার পাশে নিজ হাত দ্বারা বাঁধ দিয়ে তাকে হওযের রূপদান করলেন এবং অঞ্জলি ভরে তার মশকটিতে পানি ভরতে লাগলেন। 

হাজেরার ভরা শেষ হলেও পানি উথলে উঠতে থাকল।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ ইসমাঈলের মায়ের উপর করুণা বর্ষণ করুন। 

যদি তিনি যমযমকে বাঁধ না দিয়ে ঐভাবে ছেড়ে দিতেন। অথবা যদি তিনি অঞ্জলি দিয়ে মশক না ভরতেন, 

তবে যমযম কূপ না হয়ে একটি প্রবহমান ঝর্ণা হত।

বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর হাজেরা নিজে পানি পান করলেন এবং শিশু পুত্রকেও দুধ পান করালেন। 

তখন ফিরিশতা তাঁকে বললেন,ধ্বংসের কোন আশংকা করবেন না। কেননা, এখানেই মহান আল্লাহর ঘর রয়েছে। 

এই শিশু তার পিতার সাথে মিলে এটি পুনর্নির্মাণ করবেন। আর আল্লাহ তাঁর খাস লোককে ধ্বংস করেন না।

ঐ সময় বায়তুল্লাহ আল্লাহর ঘরের পরিত্যক্ত স্থানটি যমীন থেকে টিলার মত উঁচু হয়ে ছিল। 

স্রোতের পানি এলে তার ডান-বাম দিয়ে বয়ে যেত।

হাজেরা এইভাবে দিন যাপন করছিলেন। শেষ পর্যন্ত জুরহুম গোত্রের কিছু লোক ’কাদা’ নামক স্থানের পথ বেয়ে পার হয়ে যাচ্ছিল। 

তারা মক্কার নীচু ভূমিতে অবতরণ করল এবং দেখতে পেল কতকগুলো পাখী চক্রাকারে উড়ছে। 

তখন তারা বলল, নিশ্চয় এই পাখিগুলি পানির উপরই ঘুরছে। অথচ আমরা এ ময়দানে বহুকাল কাটিয়েছি। 

কিন্তু কখনো এখানে কোন পানি দেখিনি। অতঃপর তারা একজন বা দু’জন দূত সেখানে পাঠাল। তারা গিয়েই পানি দেখতে পেল।

ফিরে এসে সবাইকে পানির খবর দিল। খবর পেয়ে সবাই সেদিকে এসে দেখল, ইসমাঈলের মা পানির নিকট বসে আছেন। 

তারা তাঁকে বলল, আমরা আপনার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করতে চাই। আপনি আমাদেরকে অনুমতি দেবেন কি?

তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। তবে এ পানির উপর তোমাদের কোন স্বত্বাধিকার থাকবে না। তারা বলল, ঠিক আছে।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ ঘটনা ইসমাঈলের মায়ের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দিল। 

যেহেতু তিনি তো সঙ্গী-সাথীই চাচ্ছিলেন। সুতরাং তারা তাদের পরিবার-পরিজনের কাছেও খবর পাঠাল। 

তারাও এসে তাদের সাথে বসবাস করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত সেখানে তাদের অনেক ঘর-বাড়ি হল। ইসমাঈলও বড় হলেন। 

তাদের নিকট থেকে তাদের ভাষা আরবী শিখলেন। বড় হলে তারা তাঁকে পছন্দ করল এবং তাঁর প্রতি মুগ্ধ হল। 

অতঃপর তিনি যৌবনপ্রাপ্ত হলে তারা তাদেরই এক মেয়ের সঙ্গে তাঁর বিবাহ দিলেন। এরপর ইসমাঈলের মা মৃত্যুবরণ করলেন।

ইসমাঈলের বিবাহের পর ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর পরিত্যক্ত পরিজনকে দেখার জন্য এখানে এলেন। 

কিন্তু এসে ইসমাঈলকে পেলেন না। পরে তাঁর স্ত্রীর নিকট তাঁর সম্পর্কে জানতে চাইলেন। স্ত্রী বললেন, 

তিনি আমাদের রুযীর সন্ধানে বেরিয়ে গেছেন। এক বর্ণনা অনুযায়ী আমাদের জন্য শিকার করতে গেছেন।

আবার তিনি পুত্রবধূর কাছে তাঁদের জীবনযাত্রা ও অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। 

বধূ বললেন, আমরা অতিশয় দুর্দশা, দুরবস্থা, টানাটানি এবং ভীষণ কষ্টের মধ্যে আছি।

তিনি ইব্রাহীম (আঃ)-এর নিকট নানা অভিযোগ করলেন। তিনি তাঁর পুত্রবধূকে বললেন, 

তোমার স্বামী বাড়ি এলে তাঁকে আমার সালাম জানাবে এবং বলবে, সে যেন তার ঘরের দরজার চৌকাঠ বদলে নেয়। এই বলে তিনি চলে গেলেন।

ইসমাঈল যখন বাড়ি ফিরে এলেন, তখন তিনি ইব্রাহীমের আগমন সম্পর্কে একটা কিছু ইঙ্গিত পেয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, 

তোমাদের নিকট কেউ কি এসেছিলেন? স্ত্রী বললেন, হ্যাঁ, এই এই আকৃতির একজন বয়স্ক লোক এসেছিলেন। 

আপনার সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করছিলেন। আমি তাঁকে আপনার খবর দিলাম। 

পুনরায় আমাকে আমাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমি তাকে জানালাম যে, আমরা খুবই দুঃখকষ্ট ও অভাবে আছি।

ইসমাঈল বললেন, তিনি তোমাকে কোন কিছু অসিয়ত ক’রে গেছেন কি? স্ত্রী জানালেন, হ্যাঁ, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, 

আপনাকে তার সালাম পৌঁছাতে এবং আরো বলেছেন, আপনি যেন আপনার দরজার চৌকাঠ বদলে ফেলেন। 

ইসমাঈল (আঃ) বললেন, তিনি ছিলেন আমার পিতা এবং তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, 

যেন তোমাকে আমি তালাক দিয়ে দিই। কাজেই তুমি তোমার বাপের বাড়ি চলে যাও।

সুতরাং ইসমাঈল (আঃ) তাঁকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং ’জুরহুম’ গোত্রের অন্য একটি মেয়েকে বিবাহ করলেন। 

অতঃপর যতদিন আল্লাহ চাইলেন ইব্রাহীম (আঃ) ততদিন এঁদের থেকে দূরে থাকলেন। পরে আবার দেখতে এলেন। 

কিন্তু ইসমাঈল (আঃ) সেদিনও বাড়িতে ছিলেন না। তিনি পুত্রবধূর ঘরে প্রবেশ করলেন এবং ইসমাঈল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। 

স্ত্রী জানালেন তিনি আমাদের খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে গেছেন। ইব্রাহীম (আঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কেমন আছ?

তিনি তাঁর নিকট তাঁদের জীবনযাত্রা ও সাংসারিক অবস্থা সম্পর্কেও জানতে চাইলেন? পুত্রবধূ উত্তরে বললেন, 

আমরা ভাল অবস্থায় এবং সচ্ছলতার মধ্যে আছি। এ বলে তিনি আল্লাহর প্রশংসাও করলেন। ইব্রাহীম (আঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, 

তোমাদের প্রধান খাদ্য কী?পুত্রবধূ উত্তরে বললেন, মাংস। বললেন, তোমাদের পানীয় কী? বধূ বললেন, পানি।

ইব্রাহীম (আঃ) দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! এদের মাংস ও পানিতে বরকত দাও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

ঐ সময় তাদের এলাকায় খাদ্যশস্য উৎপন্ন হত না। যদি হত, তাহলে ইব্রাহীম (আঃ) সে ব্যাপারে তাঁদের জন্য দু’আ ক’রে যেতেন।

বর্ণনাকারী বলেন, মক্কার বাইরে কোন লোকই শুধু গোসত এবং পানি দ্বারা জীবন-যাপন করতে পারে না। 

কেননা, শুধু গোসত ও পানি সর্বদা তার স্বাস্থ্যের অনুকূল হতে পারে না।

আলাপ শেষে ইব্রাহীম (আঃ) পুত্রবধূকে বললেন, তোমার স্বামীকে আমার সালাম বলবে এবং তাকে আমার পক্ষ থেকে হুকুম করবে,

সে যেন তার দরজার চৌকাঠ বহাল রাখে।

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ইব্রাহীম (আঃ) এসে বললেন, ইসমাঈল কোথায়? পুত্রবধূ বললেন, তিনি শিকার করতে গেছেন।

অতঃপর তিনি বললেন, আপনি কি নামবেন না, কিছু পানাহার করবেন না। তিনি বললেন, তোমাদের খাদ্য ও পানীয় কী? 

বধূ বললেন, আমাদের খাদ্য গোসত এবং পানীয় পানি। তিনি দু’আ দিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! এদের গোসত ও পানিতে বরকত দাও।

আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইব্রাহীমের দু’আর বরকত, মক্কায় প্রকাশ পেয়েছে।

ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, তোমার স্বামী এলে তাকে সালাম বলে দিয়ো এবং আদেশ করো, সে যেন তার দরজার চৌকাঠ অপরিবর্তিত রাখে।

অতঃপর ইসমাঈল (আঃ) যখন বাড়ি এসে স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের নিকট কেউ এসেছিলেন কি?স্ত্রী বললেন, হ্যাঁ, 

একজন সুন্দর আকৃতির বৃদ্ধ এসেছিলেন। অতঃপর স্ত্রী তাঁর প্রশংসা করলেন ও বললেন, 

তারপর তিনি আপনার সম্পর্কে জানতে চাইলেন, আমি তখন তাঁকে আপনার খবর বললাম। 

অতঃপর তিনি আমাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। আমি তাঁকে খবর দিলাম যে, আমরা ভালই আছি।

স্বামী বললেন, আর তিনি তোমাকে কোন অসিয়ত করেছেন কি? স্ত্রী বললেন, তিনি আপনাকে সালাম বলেছেন এবং 

আপনার দরজার চৌকাঠ অপরিবর্তিত রাখার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। ইসমাঈল (আঃ) তাঁর স্ত্রীকে বললেন, তিনি আমার আববা,

আর তুমি হলে চৌকাঠ। তিনি নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আমি যেন তোমাকে স্ত্রী হিসাবে বহাল রাখি।

অতঃপর ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুদিন তাঁদের থেকে দূরে থাকলেন। পরে আবারো তাঁদের নিকট এলেন। 

ইসমাঈল (আঃ) তখন যমযমের নিকটস্থ একটি বড় গাছের নীচে বসে নিজের তীর ছুলছিলেন। 

পিতাকে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন। অতঃপর উভয়ে পিতা-পুত্রের সাক্ষাৎকালীন 

যথাযথ আচরণ প্রদর্শন করলেন। তারপর ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, হে ইসমাঈল! 

আল্লাহ আমাকে একটি কাজের হুকুম দিয়েছেন। ইসমাঈল (আঃ) বললেন, আপনার প্রতিপালক যা আদেশ দিয়েছেন, 

তা সম্পাদন ক’রে ফেলুন। ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, তুমি আমার সহযোগিতা করবে কি? 

ইসমাঈল (আঃ) বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই আমি আপনার সহযোগিতা করব।

ইব্রাহীম (আঃ) পার্শ্ববর্তী যমীনের তুলনায় উঁচু একটি টিলার দিকে ইঙ্গিত ক’রে বললেন, 

এখানে একটি ঘর বানাতে আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

অতঃপর ইব্রাহীম (আঃ) কা’বা ঘরের ভিত উঠাতে লেগে গেলেন। পুত্র ইসমাঈল (আঃ) তাঁকে পাথর যোগান দিতে থাকলেন।

আর তিনি দেওয়াল গাঁথতে লাগলেন। অতঃপর যখন দেওয়াল উঁচু হল, তখন ইসমাঈল এই পাথর (মাক্বামে ইব্রাহীম) নিয়ে এসে 

তাঁর সামনে রাখলেন। তিনি তার উপর খাড়া হয়ে পাথর গাঁথতে লাগলেন। আর ইসমাঈল (আঃ) তাঁকে পাথর তুলে দিতে থাকলেন। 

সেই সময় উভয়েই এই দু’আ করতে থাকলেন হে আমাদের মহান প্রতিপালক! আমাদের নিকট থেকে এ কাজটুকু গ্রহণ কর। 

নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা। (সূরা বাক্বারাহ ১২৭)

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ইব্রাহীম (আঃ) ইসমাঈল (আঃ) ও তাঁর মাকে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন। তাঁদের সঙ্গে ছিল একটি মশক; 

তাতে পানি ছিল। ঈসমাঈলের মা সেই পানি পান করতেন ও তাতেই তাঁর শিশুর জন্য দুধ জমে উঠত। 

পরিশেষে মক্কায় পৌঁছে ইব্রাহীম তাঁদেরকে বড় গাছের নিচে রেখে নিজ অন্যান্য পরিজনের নিকট ফিরে যেতে লাগলেন। 

ইসমাঈলের মা তাঁর পিছন ধরলেন। অতঃপর যখন তাঁরা কাদা নামক স্থানে উপস্থিত হলেন, 

তখন তিনি তাঁর পিছন থেকে ডাক দিলেন, হে ইব্রাহীম! আপনি আমাদেরকে কার ভরসায় ছেড়ে যাচ্ছেন?

তিনি বললেন, আল্লাহর ভরসায়। হাজেরা বললেন, আল্লাহকে নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। তারপর তিনি ফিরে এলেন। 

তিনি সেই পানি পান করতে লাগলেন ও তাতেই তাঁর শিশুর জন্য দুধ জমে উঠতে লাগল। 

অবশেষে যখন পানি শেষ হয়ে গেল, তখন তিনি মনে মনে বললেন, অন্যত্র গিয়ে দেখি, যদি কারো সন্ধান পাই।

বর্ণনাকারী বলেন, সুতরাং তিনি গিয়ে সাফা পর্বতে চড়লেন। অতঃপর তিনি চারিদিকে নজর ফিরিয়ে দেখতে লাগলেন, 

কেউ কোথাও আছে কি না? কিন্তু কেউ কোথাও আছে বলে তিনি অনুভব করলেন না। 

অতএব সাফা থেকে নেমে অন্যত্র হাঁটতে লাগলেন এবং যখন উপত্যকায় এসে পৌঁছলেন, তখন ছুটতে লাগলেন। 

অতঃপর মারওয়াতে এসে পৌঁছলেন। এইভাবে তিনি কয়েক চক্র করলেন। তারপর মনে মনে বললেন, 

গিয়ে দেখি আবার ছেলে কী করছে? সুতরাং তিনি গিয়ে দেখলেন, সে পূর্বের অবস্থায় আছে। 

সে যেন মৃত্যুযন্ত্রণায় ছট্ফট্ করছে। তা দেখে তিনি অস্থির হয়ে উঠলেন। তিনি মনে মনে বললেন, 

গিয়ে দেখি, যদি কারো সন্ধান পাই। সুতরাং তিনি গিয়ে সাফা পর্বতে চড়লেন। 

অতঃপর তিনি চারিদিকে নজর ফিরিয়ে দেখতে লাগলেন, কেউ কোথাও আছে কি না? 

কিন্তু কেউ কোথাও আছে বলে তিনি অনুভব করলেন না। এইভাবে তিনি সাতবার আসা-যাওয়া পূর্ণ করলেন। 

তারপর মনে মনে বললেন, গিয়ে দেখি আবার ছেলে কী করছে? এমন সময় এক গায়বী আওয়াজ শুনলেন। 

তিনি বললেন, আপনার নিকট যদি কোন মঙ্গল থাকে, তাহলে আমাদেরকে সাহায্য করুন। দেখলেন, তিনি জিবরীল (আঃ)। 

তিনি তাঁর পায়ের গোড়ালি দ্বারা এইভাবে আঘাত করলেন। আর অমনি পানির ঝর্ণাধারা বের হয়ে এল। 

তা দেখে ইসমাঈলের মা বিস্ময়াবিষ্টা হলেন এবং অঞ্জলি ভরে মশকে ভরতে লাগলেন। 

অতঃপর বর্ণনাকারী বাকী দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করলেন। ( বুখারীর ৩৩৬৪-৩৩৬৫) 

Sunday, 25 August 2024

মি‘রাজে কীভাবে সালাত ফরজ হলো How did prayer become obligatory in Miraj?

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ 

আবূ যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, 

তিনি বলেছেন আমি মক্কায় থাকা অবস্থায় আমার গৃহের ছাদ উন্মুক্ত করা হ’ল। 

অতঃপর জিবরীল (আঃ) অবতীর্ণ হয়ে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। 

আর তা যমযমের পানি দ্বারা ধৌত করলেন। 

অতঃপর হিকমাত ও ঈমানে ভর্তি একটি সোনার পাত্র নিয়ে আসলেন 

এবং তা আমার বুকের মধ্যে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। 

অতঃপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আকাশের দিকে নিয়ে চললেন। 

পরে যখন দুনিয়ার আকাশে আসলাম জিব্রীল (আঃ) আসমানের রক্ষককে বললেন দরজা খোল। 

আসমানের রক্ষক বললেন কে আপনি? 

জিবরীল (আঃ) বললেন আমি জিব্রীল (আঃ)।

(আকাশের রক্ষক) বললেন আপনার সঙ্গে কেউ রয়েছেন কি? 

জিব্রীল (আঃ) বললেন হাঁ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রয়েছেন।

অতঃপর রক্ষক বললেন তাকে কি ডাকা হয়েছে? 

জিবরীল (আঃ) বললেন হ্যাঁ। 

অতঃপর যখন আমাদের জন্য দুনিয়ার আসমানকে খুলে দেয়া হল 

আর আমরা দুনিয়ার আসমানে প্রবেশ করলাম তখন দেখি সেখানে এমন এক ব্যক্তি উপবিষ্ট রয়েছেন 

যার ডান পাশে অনেকগুলো মানুষের আকৃতি রয়েছে আর বাম পাশে রয়েছে অনেকগুলো মানুষের আকৃতি। 

যখন তিনি ডান দিকে তাকাচ্ছেন হেসে উঠছেন আর যখন বাম দিকে তাকাচ্ছেন কাঁদছেন। 

অতঃপর তিনি বললেন স্বাগতম ওহে সৎ নবী ও সৎ সন্তান। 

আমি (রাসূলুল্লাহ) জিব্রীল (আঃ) কে বললাম কে এই ব্যক্তি? 

তিনি জবাব দিলেন ইনি হচ্ছেন আদম (আঃ)। 

আর তার ডানে বামে রয়েছে তাঁর সন্তানদের রূহ। 

তাদের মধ্যে ডান দিকের লোকেরা জান্নাতী আর বাম দিকের লোকেরা জাহান্নামী। 

ফলে তিনি যখন ডান দিকে তাকান তখন হাসেন আর যখন বাম দিকে তাকান তখন কাঁদেন।

অতঃপর জিব্রীল (আঃ) আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে উঠলেন। 

অতঃপর তার রক্ষককে বললেনঃ দরজা খোল। তখন এর রক্ষক প্রথম রক্ষকের মতই প্রশ্ন করলেন। 

পরে দরজা খুলে দেয়া হল। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আবূ যার (রাঃ) উল্লেখ করেন যে, 

তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসমানসমূহে 

আদম, ইদরীস, মূসা, ঈসা এবং ইব্রাহীম (আলাইহিমুস্ সালাম)-কে পান। 

কিন্তু আবূ যার (রাঃ) তাদের স্থানসমূহ নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। 

তবে এতটুকু উল্লেখ করেছেন যে, তিনি আদম (আঃ)-কে দুনিয়ার আকাশে 

এবং ইব্রাহীম (আঃ)-কে ষষ্ঠ আসমানে পান।


আনাস (রাঃ) বলেন, জিব্রীল (আঃ) যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে 

ইদ্রীস (আঃ)এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন তখন ইদ্রীস (আঃ) বলেন, 

মারহাবা ওহে সৎ ভাই ও পুণ্যবান নবী। আমি (রাসূলুল্লাহ) বললাম, ইনি কে? 

জিব্রীল (আঃ) বললেন ইনি হচ্ছেন ইদ্রীস (আঃ)। 

অতঃপর আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করাকালে তিনি বলেন,

মারহাবা হে সৎ নবী ও পুণ্যবান ভাই। আমি বললামঃ ইনি কে? 

জিব্রীল (আঃ) বললেন, ইনি মূসা (আঃ)। 

অতঃপর আমি ঈসা (আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করাকালে তিনি বলেন,

মারহাবা হে সৎ নবী ও পুণ্যবান ভাই। আমি বললাম, ইনি কে? 

জিব্রীল (আঃ) বললেন, ইনি হচ্ছেন ঈসা (আঃ)। 

অতঃপর আমি ইব্রাহীম (আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলে তিনি বলেন,

মারহাবা হে পুণ্যবান নবী ও নেক সন্তান। আমি বললাম, ইনি কে? 

জিব্রীল (আঃ) বললেন, ইনি হচ্ছেন ইব্রাহীম (আঃ)।

ইবনু শিহাব বলেন, ইবনু হাযম (রহঃ) আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, 

ইবনু আব্বাস ও আবূ হাববা আল-আনসারী উভয়ে বলতেন, 

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

অতঃপর আমাকে আরো উপরে উঠানো হল 

অতঃপর এমন এক সমতল স্থানে এসে আমি উপনীত হই যেখানে আমি লেখার শব্দ শুনতে পাই। 

ইবনু হায্ম ও আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

অতঃপর আল্লাহ আমার উম্মাতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করে দেন। 

অতঃপর তা নিয়ে আমি ফিরে আসি। 

অবশেষে যখন মূসা (আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করি তখন তিনি বললেন,

আল্লাহ তা’আলা আপনার উম্মাতের উপর কী ফরজ করেছেন? 

আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। 

তিনি বললেন, আপনি আপনার পালনকর্তার নিকট ফিরে যান, 

কেননা আপনার উম্মাত তা আদায় করতে পারবে না।

আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা’আলা কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। 

আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট পুনরায় গেলাম আর বললাম,

কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনি পুনরায় আপনার রবের নিকট ফিরে যান। 

কারণ আপনার উম্মাত এটিও আদায় করতে পারবে না। 

আমি ফিরে গেলাম। তখন আরো কিছু অংশ কমিয়ে দেয়া হলো। 

আবারও মূসা (আঃ)-এর নিকট গেলাম, এবারও তিনি বললেন,

আপনি পুনরায় আপনার প্রতিপালকের নিকট যান। 

কারণ আপনার উম্মত এটিও আদায় করতে সক্ষম হবে না। 

তখন আমি পুনরায় গেলাম, তখন আল্লাহ বললেন, এই পাঁচই (নেকির দিক দিয়ে) পঞ্চাশ (বলে গণ্য হবে)। 

আমার কথার কোন রদবদল হয় না। 

আমি পুনরায় মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলে তিনি আমাকে আবারও বললেন,

আপনার প্রতিপালকের নিকট পুনরায় যান। 

আমি বললাম, পুনরায় আমার প্রতিপালকের নিকট যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। 

অতঃপর জিব্রীল (আঃ) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। 

আর তখন তা বিভিন্ন রঙে আবৃত ছিল, যার তাৎপর্য আমি অবগত ছিলাম না। 

অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলে আমি দেখতে পেলাম যে, 

তাতে রয়েছে মুক্তোমালা আর তার মাটি হচ্ছে কস্তুরী।

(১৬৩৬, ৩৩৪২; মুসলিম ১/৭৪, হাঃ ১৬৩, আহমাদ ২১১৯৩) 

Thursday, 22 August 2024

ঈমান

 আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণীঃ 

ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। 

১. আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। 

২. সালাত কায়িম করা। 

৩. যাকাত আদায় করা। 

৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং 

৫. রমাযানের সিয়ামব্রত পালন করা। (৪৫১৪; মুসলিম ১/৫ হাঃ ১৬, আহমাদ ৬০২২, ৬৩০৯)

ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটিঃ মুখে স্বীকার এবং কাজে পরিণত করাই হচ্ছে ঈমান। 

আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ যাতে তারা তাদের ঈমানের সঙ্গে ঈমান মজবুত করে নেয়- (সূরাহ্ ফাত্হ ৪৮/৪)।

আমরা তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম- (সূরাহ্ কাহাফ ১৮/১৩)।

এবং যারা সৎপথে চলে আল্লাহ্ তাদের অধিক হিদায়াত দান করেন- (সূরাহ্ মারইয়াম ১৯/৭৬)।

এবং যারা সৎপথ অবলম্বন করে আল্লাহ্ তাদের হিদায়াত বাড়িয়ে দেন 

এবং তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দেন- (সূরাহ্ মুহাম্মাদ ৪৭/১৭)।

যাতে মু’মিনদের ঈমান বেড়ে যায়- (সূরাহ্ মুদ্দাসসির ৭৪/৩১)। 

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন, এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বাড়িয়ে দিল? 

যারা মু’মিন এ তো তাদের ঈমান বাড়িয়ে দেয়- (সূরাহ্ আত্-তওবা ৯/১২৪)। 

এবং তাঁর বাণী,সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর; একথা তাদের ঈমানের দৃঢ়তা বাড়িয়ে দিল- (সূরাহ্ আলে-ইমরান ৩/১৭৩)। 

এতে তাদের ঈমান ও আনুগত্য আরও বৃদ্ধি পেল (সূরাহ্ আহযাব ৩৩/২২)। 

ইবনু ’উমার (রাঃ) বলেন,বান্দা প্রকৃত তাকওয়ায় পৌঁছতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে, 

মনে যে বিষয় সন্দেহের সৃষ্টি করে, তা পরিত্যাগ না করে।

মুজাহিদ (রাঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ’’অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! 

আমি আপনাকে এবং নূহকে একই ধর্মের আদেশ করেছি’’- (সূরাহ্ শূরা ৪২/১৩)। 

এ মর্মে আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ’’বলে দিন, 

আমার প্রতিপালক তোমাদের একটুও পরোয়া করবেন না যদি তোমরা ’ইবাদাত না কর’’- (সূরাহ্ আল-ফুরক্বান ২৫/৭৭)। 

ইবন ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,